সুশাসন – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়

সুশাসন – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়

পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়

পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়: আধুনিক গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সুশাসন (Good Governance) একটি আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুশাসন বলতে ভালো, দক্ষ, কার্যকর ও জনকল্যাণমুখী শাসনকে বোঝায়। সুশাসনকে একটি ধারণার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত বা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সুশাসন একটি বহুমাত্রিক ধারণা। ১৯৮৯ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষায় প্রথম সুশাসন প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। সুশাসনের সঙ্গে টেকসই মানব উন্নয়ন (Sustainable human development) বিশেষভাবে জড়িত।

তাই একটি রাষ্ট্রে সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। সুশাসন ছাড়া জনগণের মৌলিক অধিকার তথা মানবাধিকার ও বাস্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায় না। একটি দেশে সুশাসন নিশ্চিত হলেই গণতন্ত্রের সুফল জনগণ উপভোগ করতে পারে। তাই এ অধ্যায়ে সুশাসনের গুরুত্ব, সুশাসনের সমস্যা ও সমস্যা সমাধানের উপায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে।


পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়

১. আইনের শাসন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: আইনের শাসন বলতে আইনের প্রাধান্য স্বীকার করে আইন অনুযায়ী শাসন করাকে বোঝায়। আইন হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতগুলো বিধিবদ্ধ নিয়মাবলির সমষ্টি যা মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইনের  শাসন সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আইনের শাসন নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। ফলে এর দ্বারাই সাম্য, স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে রাজনৈতিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে জনসাধারণ বা সংসদের নিকট ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতাকে বোঝায়। জবাবদিহিতা হলো সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতা।

আর রাজনৈতিক জবাবদিহিতা হলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক দলের জনসাধারণের বা সংসদের নিকট তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধতা ও ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতা। রাজনৈতিক জবাবদিহিতা দুর্বল হলে সামাজিক ও আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. স্বজনপ্রীতি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: স্বজনপ্রীতি বলতে নিজের আত্মীয়স্বজনের বিশেষ সুবিধা প্রদান করাকে বোঝায়। সাধারণভাবে স্বজনপ্রীতি হলো আত্মীয় তোষণ। স্বজনপ্রীতির কারণে স্বজনরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। এজন্য প্রশাসনিক অর্থে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে স্বজনদের অগ্রাধিকার প্রদান করাই হচ্ছে স্বজনপ্রীতি।

৪. সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত- যুক্তি দাও।

উত্তর: সুশাসনই গণতন্ত্রকে কার্যকর ও অর্থবহ করে তোলে বিধায় ইহা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সুশাসনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সুশাসন দ্বারাই জনগণের মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। সুশাসনের ফলেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সুশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পরিহার করে গণতান্ত্রিক চর্চা অর্থাৎ জাতির বৃহত্তম স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব। তাই বলা যায়, সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত কথাটি যথার্থ।

৫. দায়িত্বশীলতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: স্থান ও কালভেদে ব্যক্তির স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের প্রবণতাকে দায়িত্বশীলতা বলে। দায়িত্বশীলতা মূল্যবোধের অন্যতম উপাদান। এটি সুশাসনেরও অন্যতম উপাদান। দায়দায়িত্ব বলতে কেবল সরকারের দায়দায়িত্বকে বোঝায় না, ব্যক্তিগত অবস্থানে প্রত্যেক ব্যক্তির সমাজের সকলের জন্য দায়িত্ব ও সমাজের সকলের নিকট জবাবদিহিতাকে বোঝায়। দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় এবং দুর্নীতিও হ্রাস পায়। মোটকথা, মূল্যবোধের উপাদান দায়িত্বশীলতা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একান্ত আবশ্যক।

৬. ডিজিটাল পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ডিজিটাল পদ্ধতি মূলত ডিজিট নির্ভর পদ্ধতি। এখানে ডিজিট নির্ভর পদ্ধতি দ্বারা কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতি হলো এমন একটি পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে কোনো স্থানের বিভিন্ন কাজকর্মে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন- কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।

পরিবহনের আসন সংরক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ, রোগ নির্ণয় ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বর্তমানে অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারাইজড এসব পদ্ধতিই ডিজিটাল পদ্ধতি।

৭. সুশাসন কীভাবে আইনের শাসন নিশ্চিত করে?

উত্তর: আইনের দৃষ্টিতে নাগরিক হিসেবে সবার সমান অধিকার ও আইনের আশ্রয় লাভের সমান সুযোগ থাকলে আইনের শাসন আছে বলে প্রতীয়মান হয়। সুশাসন ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের সমানাধিকার, সাম্য- সততা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহলেই সমাজ বা রাষ্ট্রে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তি স্বার্থ ইত্যাদির কোনো স্থান থাকবে না। ফলে উক্ত সমাজ বা রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

৮. দুর্নীতি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: দুর্নীতি বলতে সাধারণভাবে আইনবিরোধী কাজসহ নীতি-আদর্শ ও মূল্যবোধ বহির্ভূত কাজকে বোঝায়। দুর্নীতি হলো এক ধরনের সামাজিক অপরাধ। যাকে বর্তমানে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যখন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করা হয় তখন তাকে দুর্নীতি বলে।

৯. সুশাসনের পথে প্রধান দুটি অন্তরায় লেখ।

উত্তর: সুশাসনের পথে প্রধান দুটি অন্তরায় হলো-
প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব: উন্নয়নশীল দেশের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি আমলারা নিজেদেরকে জনগণের প্রভু মনে করে থাকে। রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বাইরে থাকেন। জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় অনেক সময় প্রশাসন স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে।

দুর্নীতি: দুর্নীতিকে দেখা হয় অভিশাপ হিসেবে। সুশাসনের পথে সরাসরি বাধা হিসেবে কাজ করে দুর্নীতি। শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি জনসাধারণকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

১০. সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবশ্যক কেন?

উত্তর: অবাধ তথ্যপ্রবাহ চলমান রাখতে ও জনমত গঠনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবশ্যক। গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণ সারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারি ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন দুর্নীতি ইত্যাদি খবরাখবর জানতে পারে।

জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সরকার অনেক সময় তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে গণমাধ্যমের ওপর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করে যা সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. সুশাসন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বোঝায়। সুশাসন একটি বহুমাত্রিক ধারণা। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় সর্বপ্রথম সুশাসন প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সুশাসনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির পরিচালনা, শাসন ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারণ, জনকল্যাণ নিশ্চিত করা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১২. ক্ষমতার ভারসাম্য কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে থাকে?

উত্তর: রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ও ভারসাম্য আনয়ন সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান নিয়ামকগুলোর একটি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার বণ্টন হতে হবে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার বিধান সংবলিত একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যথাযথ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আইনসভা থাকতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

১৩. ‘সুশাসন ও দুর্নীতি এক সাথে অবস্থান করতে পারে না।’- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সুশাসন ও দুর্নীতি কখনোই এক সাথে অবস্থান করতে পারে না। কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে জাতীয় সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টনে অসামঞ্জস্যতা, ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান তৈরি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

১৪. অবাধ তথ্য প্রবাহ না থাকলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: অবাধ তথ্যপ্রবাহের অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশিনের মাধ্যমে জনগণ রাজনৈতিক খবরাখবর ও আমলাদের কর্মকাণ্ডের ভালোমন্দ দিক অনুধাবন করতে পারে। তাই গণমাধ্যমকে তথ্যপ্রবাহের পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবাধ তথ্য প্রবাহ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অনাকাঙ্ক্ষিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এতে করে জনগণ সরকারে সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত হতে পারে না এবং গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে না। ফলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়।

১৫. সমাজ এবং রাষ্ট্রে সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: সমাজ এবং রাষ্ট্রে সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সুশাসনের ব্যত্যয় ঘটলে সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। কারণ সুশাসন হলো সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া। সুশাসন না থাকলে যেকোনো শাসনব্যবস্থায় জনপ্রত্যাশা প্রতিফলিত হয় না। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ যদি নিজেদের শাসন প্রক্রিয়ার বাইরের অংশ বলে মনে করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে না পারে বা না চায় তাহলে সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর জবাবদিহিতা কমে যায়। ফলে দুর্নীতির দ্বার উন্মোচিত হয়।

১৬. সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো দারিদ্র্য- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো দারিদ্রা। দারিদ্রদ্র্য ও সুশাসন পাশাপাশি অবস্থান করতে পারে না। দারিদ্রোর ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো হলো দুর্ভিক্ষ, অনাহার, অপুষ্টি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অপ্রতুলতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন উর্ধ্বগতি প্রভৃতি। অর্থাৎ দারিদ্রা হলো মানুষের জীবনধারণের মৌলিক অধিকার পূরণের অপূর্ণতা। মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের পথে দারিদ্রদ্র্য মানুষের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্রাকে মোকাবিলা না করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না।

১৭. গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে?

উত্তর: গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ব্যতীত সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌছাতে হবে। গণতন্ত্র যখন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌঁছাবে তখন তার প্রতিষ্ঠিত কার্যাবলি থাকবে। আর এ কার্যাবলি সমাজকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো শান্তি ও স্থিতিশীলতার অভাব। শান্তি ও স্থিতিশীলতার সমস্যাও দূর হয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দ্বারা।

১৮. সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দক্ষ ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রয়োজন- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দক্ষ ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব নিজের দলের চেয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেবে। সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে তাদের চাওয়া-পাওয়া প্রত্যাশা সম্পর্কে অবগত হবে। সুশাসনের প্রতিবন্ধকতাসমূহ চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের উদ্যোগ নেবে। গণতান্ত্রিক মূলবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব কখনোই শাসনক্ষমতা বা রাজনৈতিক পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইবে না। অর্থাৎ দক্ষ ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের ফলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

১৯. “রাজনৈতিক অস্থিরতা সুশাসনের পথে বড় অন্তরায়।”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক এবং অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সুশাসনের পথে বড় অন্তরায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশে অরাজক অবস্থা বিরাজ করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুষম বিকাশ ঘটে না ফলে নেতৃত্বের বিকাশ ব্যাহত হয়। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। আর সার্বিক বিচারে সুশাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

২০. “সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জরুরি।”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উন্নয়নশীল দেশের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি আমলারা নিজেদেরকে জনগণের প্রভু মনে করে থাকে। রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বাইরে থাকেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। জনগণের নিকট কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় অনেক সময় প্রশাসন স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অতীব জরুরি।


আশাকরি “সুশাসন – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ২য় অধ্যায়” নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। পৌরনীতি ও সুশাসন এর সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2017 ThemesBazar.Com