অল্প খরচে কিংবা একদম ফ্রিতে বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার করার সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে স্কলারশিপ। বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা কেমন হতে হয় এবং কিভাবে আপনিও বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য স্কলারশিপের আবেদন করা থেকে শুরু করে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন এসব বিষয় নিয়ে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
উচ্চশিক্ষা যদি হয় আপনার স্বপ্ন, তবে স্কলারশিপ আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার একমাত্র কারিগর হতে পারে। স্কলারশিপ পেলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে বিশ্বের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ পাওয়া যায়। নয়তো, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে চাইলে প্রতি মাসে গুনতে হবে লক্ষাধিক টাকা।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা কেমন হতে হয় এবং কিভাবে স্কলারশিপের আবেদন করতে হয় এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ুন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ালেখা করতে চাচ্ছেন, সেখানে হাজারও শিক্ষার্থীর মাঝে থেকে আপনাকে বাছাই করার জন্য অবশ্যই আপনার শিক্ষাগত বা অন্য যোগ্যতা ভালো হতে হবে। তবে সাধারণত, বিদেশে স্কলারশিপ পেতে হলে শিক্ষার্থীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে:
এছাড়াও, স্কলারশিপের জন্য শিক্ষার্থীর আবেদনপত্র, রেকমেন্ডেশন লেটার এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে থাকে। একটি রেকমেন্ডেশন লেটার ভালো হলে তা একজন শিক্ষার্থীর স্কলারশিপ পাওয়ার দাঁড় উন্মোচন করে দিতে পারে।
তবে, স্কলারশিপের ধরণের উপর নির্ভর করে শিক্ষাগত যোগ্যতা কম বা বেশি লাগতে পারে। ফুল ফ্রি স্কলারশিপ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই পড়ালেখায় ভালো হতে হবে।
স্কলারশিপ পেতে চায় এমন শিক্ষার্থী আমাদের দেশে কম নেই। কিন্তু, স্কলারশিপের আবেদন করার নিয়ম অনেকেই জানেন না। কিভাবে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফ্রি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হবে না জানলে স্কলারশিপ পাবেন না। তাই, স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:
ধাপ ১: স্কলারশিপ সম্পর্কে জেনে নিন
স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার আগে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিতে চাচ্ছেন এবং পড়ালেখা করতে চাচ্ছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেতে যোগ্যতা কেমন লাগে ও সুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে তাদের দেয়া স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন।
এতে করে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপের সুবিধা, অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এছাড়াও, স্কলারশিপের জন্য তাদের দেয়া শর্ত এবং কি কি করলে স্কলারশিপ পেতে পারেন আপনিও সেটি জানতে পারবেন তাদের ওয়েবসাইট থেকেই। তাই, গুরুত্ব সহকারে এসকল বিষয় জেনে নিতে হবে।
ধাপ ২: আবেদনপত্র পূরণ করুন
স্কলারশিপের আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করুন। আবেদনপত্রে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরীক্ষার ফলাফল, ভাষা দক্ষতা (আইইএলটিএস বা টোফেল), অন্যান্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করুন। আবেদনপত্রের সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
স্কলারশিপের আবেদন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তাই, সময় নিয়ে আবেদন করুন। অবশ্যই সঙ্গে সকল ডকুমেন্ট রাখবেন। এসব ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হতে পারে।
ধাপ ৩: রেকোমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করুন
স্কলারশিপের জন্য একটি রেকোমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন হয়। আপনার শিক্ষক বা অন্য কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তি যার কাছে আপনি পড়ালেখা করেছেন বা আপনার সম্পর্কে সবকিছু জানে তার কাছ থেকে রেকোমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করুন। যে ব্যক্তি আপনাকে রেকোমেন্ডেশন লেটার দিবেন, তাকে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও স্কলারশিপের জন্য আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত দিতে হবে।
এতে করে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনার সুযোগ থাকবে অনেক বেশি। যেমনটা আমি উপরে উল্লেখ করেছিলাম যে, একটি ভালো রেকোমেন্ডেশন লেটার আপনাকে স্কলারশিপ পাইয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট তত ভালো না হলেও একটি ভালো রেকোমেন্ডেশন লেটার এর জোরে আপনি বিদেশে ফুল ফ্রি স্কলারশিপে পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
ধাপ ৪: কভার লেটার লিখুন
স্কলারশিপ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটি কভার লেটার লিখতে হবে। কভার লেটারে আপনার বিষয়ে, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে এবং অন্যান্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে। কভার লেটারটি অনেক সুন্দর করে লিখতে হবে যেন সবার থেকে আপনার লেখাটি আলাদা হয়।
কভার লেটার সুন্দর হলে স্কলারশিপ পাওয়ার চান্স বেড়ে যায়। তাই, অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে অবশ্যই পুর্নাঙ্গ তথ্য দিয়ে একটি কভার লেটার লিখতে হবে। কভার লেটার লেখার সময় আপনি কেন স্কলারশিপের জন্য আবেদন করছেন এবং আপনার ভিশন কি এসকল বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
এতে করে আপনার কভার লেটারটি আকর্ষণীয় হবে। কভার লেটারে কোনো প্রকার বানান ভুল করা যাবে না। আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন কভার লেটারে। তবেই, বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
ধাপ ৫: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন
স্কলারশিপ পেতে হলে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষাগত সনদপত্র, পরীক্ষার ফলাফল, ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র (IELTS or TOEFL), রেকোমেন্ডেশন লেটার, কভার লেটার ইত্যাদি রাখতে হবে। কাগজপত্রগুলো যথাযথভাবে সত্যায়িত করে সাবমিট করুন।
ধাপ ৬: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করুন
স্কলারশিপের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আবেদন করলে আপনার সময় নষ্ট হবে এবং আবেদনটি বৃথা করা হবে। তাই, সময় থাকতে আবেদন করতে হবে। এছাড়াও, আবেদন করার সময় যা যা চাওয়া হয়েছে সেগুলো সাবমিট করতে হবে। নয়তো, আপনার আবেদন অনুমোদন করবে না।
বিদেশে স্কলারশিপ পেতে IELTS স্কোর কত লাগে?
বিদেশে স্কলারশিপ পেতে আইইএলটিএস বা টোফেল এ ন্যূনতম ৬.৫ স্কোর লাগে। এর বেশি হলে আপনি অগ্রাধিকার পাবেন। তবে, এর থেকে কম হলে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
IELTS ছাড়া স্কলারশিপ পাওয়া যায়?
IELTS ছাড়াও TOEEL স্কোর দিয়ে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অথবা, যে দেশে পড়তে যাবেন, সেই দেশের ভাষা জানতে হবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই চায় স্কলারশিপ নিয়ে পড়ালেখা করার। এতে করে, অল্প খরচে বা একদম ফ্রিতে পড়ালেখা করার সুযোগ থাকে। তাই, সবাই বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু, বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে অনেক কম মানুষ অবগত আছেন।
এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন বলে আশা করছি। উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে সহজেই বিদেশে ফুল ফ্রি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন আপনিও।
[…] […]