পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়: আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদান হলো সরকার। সরকার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। সরকার তার কার্যাবলি বাস্তবায়ন করে থাকে তিনটি অপরিহার্য অঙ্গ বা বিভাগের মাধ্যমে। যথা: আইন বিভাগ (Legislature), শাসন বিভাগ (Executive) ও বিচার বিভাগ (Judiciary)। এ অধ্যায়ে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
উত্তর: যখন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তখন একে গণভোট বলে। গণভোটে কেবল হ্যাঁ এবং না যুক্ত প্রতীক থাকে বলে এটি হ্যাঁ-না ভোট নামেও পরিচিত। এটি প্রতিনিধি বাছাই নয়; বরং মতামত যাচাই করতে আয়োজন করা হয়।
উত্তর: আইনসভা যখন দুটি পরিষদ নিয়ে গঠিত হয় তখন তাকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার একটি নিম্নকক্ষ এবং অন্যটি উচ্চকক্ষ নামে অভিহিত। উভয় কক্ষের সদস্যসংখ্যা কত হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে নিম্নকক্ষের সদস্যরা সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। আর উচ্চকক্ষের সদস্যরা বিভিন্নভাবে উচ্চকক্ষে আসেন। যেমন- ১. উত্তরাধিকারসূত্রে, ২. মনোনয়নের মাধ্যমে, ৩. প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এবং ৪, পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।
উত্তর: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে সরকারের তিনটি বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতাকে বোঝায়, যেখানে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না, প্রয়োজনে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজের সাথে সমন্বয় সাধন করবে। সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে, যথা: আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অর্থ হলো সরকারের এ তিনটি বিভাগের ক্ষমতা ও কাজকে পৃথক বা স্বতন্ত্র করে দেওয়া। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগ তার নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে মধ্যে স্বাধীন থাকবে। এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে বাধা প্রদান বা হস্তক্ষেপ করবে না। এই নীতি অনুসারে আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করবে, শাসন বিভাগ সেসব আইন কার্যকর করবে এবং বিচার বিভাগ সেসব আইনের ব্যাখ্যা দান এবং বিভিন্ন মামলায় প্রয়োগ করবে।
উত্তর: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কর্তব্য পালনে বিচারকদের স্বাধীনতাকে বোঝায়। মূলত, সরকারের শাসন ও আইন বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচারকদের বিচার কাজ পরিচালনার ক্ষমতাই হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। এক্ষেত্রে বিচারকদের অবাধ ক্ষমতা বা যা খুশি তাই করার ক্ষমতাকে বোঝায় না। ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।
উত্তর: কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বিভাজন করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ বিষয়সমূহ এবং অঙ্গরাজ্যগুলো আঞ্চলিক বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতির উদাহরণ।
উত্তর: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ফলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয় ও নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার কাজ করতে পারে। এভাবে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করে। নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। আর ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণের মাধ্যমেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। কাজেই ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে।
উত্তর: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক শাসকগণ শাসন পরিচালনায় চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন যা আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সদস্যদের দ্বারা সম্ভব হয় না। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক শাসকগণ শাসনসংক্রান্ত, পররাষ্ট্রীয়, সামরিক, আর্থিক, আইন প্রণয়ন, বিচারসংক্রান্ত, নিয়োগ ও অপসারণসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী এবং জনকল্যাণমূলক কাজসহ বহুবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করেন।
চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করে। সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে এবং শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আইনসভার সদস্যরাই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। এভাবে শাসন বিভাগ বর্তমানকালে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে এবং তারাই দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়।
উত্তর: যে শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তাদের কাজের জন্য সংসদ বা আইনসভার নিকট দায়ী থাকে তাকেই সংসদীয় সরকার বলা হয়। সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক হয়ে থাকে। কেননা এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সরকার তাদের দায়িত্ব ও কর্মকাণ্ডের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। আইনসভার আস্থা হারালে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়।
উত্তর: দায়িত্বশীল সরকার বলতে সাধারণত সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারকে বোঝায়। সংসদীয় কিংবা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হলো সেই সরকার যাতে শাসন বিভাগ আইন পরিষদের নিকট তার সকল কাজের জন্য দায়ী থাকে। আইন পরিষদে কোনো অনাস্থাসূচক প্রস্তাব গৃহীত হলে মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হয়। সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক হয়। এজন্যই সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারকে দায়িত্বশীল সরকার বলা হয়।
উত্তর: সরকারের বিভাগসমূহের পৃথকভাবে কার্য সম্পাদন প্রক্রিয়াকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে সরকারের তিনটি বিভাগ যথা- আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার নীতিকে বোঝায়। অর্থাৎ আইন বিভাগের আইন প্রণয়নে, শাসন বিভাগের আইনের প্রয়োগে ও বিচার বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনায় একে অন্যের হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকবে এবং প্রত্যেক বিভাগ পৃথক পৃথক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হবে। সরকারের তিনটি বিভাগের কার্যসম্পাদনের এমন নীতিকে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলা হয়।
উত্তর: নিজের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত সংগঠন হলো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী স্বেচ্ছামূলকভাবে সংগঠিত। এদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে না। এরা নিজেদের স্বার্থের পাশাপাশি দেশের স্বার্থকে বিবেচনায় নিলেও নিজেদের স্বার্থ এদের কাছে বড়। পূর্ণ ও পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য এবং কোনোভাবেই যাতে তাদের স্বার্থ ও দাবি হাতছাড়া না হয় সে দিকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।
উত্তর: গণতন্ত্র বলতে এমন এক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ, সরকার গঠন ও তা পরিচালনা করতে পারে। গ্রিক শব্দ ‘Demos’ এবং ‘Kratia’ থেকে গণতন্ত্রের উদ্ভব। ‘Demos’ শব্দের অর্থ জনসাধারণ আর ‘Kratia’ শব্দের অর্থ শাসন ক্ষমতা। সুতরাং শব্দগত অর্থে গণতন্ত্র বলতে জনসাধারণের ক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থাৎ যে শাসনব্যবস্থায় জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকে তাকেই গণতন্ত্র বলে।
উত্তর: যে রাজতন্ত্রে বা শাসনব্যবস্থায় রাজা বা রানির হাতে রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে না তাকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলে। এক্ষেত্রে রাজা বা রানির হাতে সাংবিধানিকভাবে কিছু ক্ষমতা থাকে কিন্তু সরকার পরিচালনা করে জনগণের নির্বাচিত সরকার। সীমিত রাজতন্ত্রের দেশেই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজা বা রানি হলেন নামমাত্র শাসক এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রকৃত শাসক তথা সরকারপ্রধান। বর্তমানে গ্রেট ব্রিটেন, জাপান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে এরূপ রাজতন্ত্র রয়েছে।
উত্তর: সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত না করে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে। বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে জেলা বা থানা পর্যায়ে কিছু প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হয়। জেলা বা থানা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে। আর দেশের নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে অধিক কর্তৃত্ব ন্যস্ত হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে।
উত্তর: সরকারকে রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে হয় বিধায় সরকারের তিনটি অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে সরকারকে তিন ধরনের কাজ করতে হয়। আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত, শাসন সংক্রান্ত এবং বিচার সংক্রান্ত। আইন প্রণয়নের দায়িত্ব আইন বিভাগের।
প্রণীত আইনকে কার্যকর করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের। আর আইন ভঙ্গকারীর শাস্তির বিধান প্রণয়ন করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শান্তিশৃঙ্খলা, সার্বিক উন্নয়ন ও ভারসাম্য রক্ষায় এই তিনটি বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই উক্ত তিনটি বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করা অত্যাবশ্যক।
উত্তর: নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করার নীতিটি হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে স্বাধীন, নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকাজ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। বিচার বিভাগ যদি আইন ও শাসন বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিচারকাজ করতে পারে তবে সেই বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হয়।
উত্তর: প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করছে কি না তা প্রমাণ বা প্রদর্শনের জন্য যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এবং জনগণের কাছে জানানোর বাধ্যবাধকতাই হলো প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা। প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার মধ্যে একটি হলো অভ্যন্তরীণ দায়বদ্ধতা যা প্রশাসনের পদসোপানভিত্তিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। অপরটি হলো জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ, সিটিজেন চার্টার, তথ্য কমিশন *প্রভৃতির মাধ্যমে এ ধরনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়।
উত্তর: সরকারের বিভাগসমূহের আলাদাভাবে কাজ করার নীতিটি হলো ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি। ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি’র অর্থ এই যে, সরকারের কাজকে তিনটি ভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিভক্ত করা। এ তিনটি বিভাগ হচ্ছে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। প্রতিটি বিভাগ এর স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কার্য পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।
অর্থাৎ এ নীতি অনুসারে আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করবে, শাসন বিভাগ আইনকে কার্যকর করবে এবং বিচার বিভাগ উক্ত আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করবে। এভাবে সরকারের তিনটি বিভাগ তাদের স্ব-স্ব কাজে এ বিভাগে নিয়োজিত থাকবে এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। এটাই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূলকথা।
উত্তর: স্থানীয় সরকার বলতে সাধারণত জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন এবং এ ধরনের অন্যান্য সংস্থা যেমন- পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলিকে বোঝায়। স্থানীয় সরকার হচ্ছে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসিত ইউনিট। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালুর ফলে ক্ষমতার সুস্পষ্ট বিভাজন ঘটে। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ সহজ হয় এবং দুর্নীতির পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে সর্বাধিক জনকল্যাণ ও জনসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় এবং এতে করে জনগণ অতি সহজেই উন্নত সেবা পেয়ে থাকে।
উত্তর: আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসের দুটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো- আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব: আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে আইন বিভাগের কাজ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও আইন বিভাগের পক্ষে সকল বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই কিছু কিছু আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় শাসন বিভাগের উপর অর্পণ করা হচ্ছে, যা আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতা আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতা। শাসন বিভাগ এসব ব্যর্থতা মোকাবিলা করতে গিয়ে অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। ফলে আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
উত্তর: সরকারের যে বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনভঙ্গকারীকে শাস্তি প্রদান করে তাকে বিচার বিভাগ বলে। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির বা ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের বিরোধ দেখা দিলে বিচার বিভাগ আইনের আলোকে তার মীমাংসা ও ন্যায়বিচার করে থাকে। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’-এর পাশাপাশি প্রত্যেক দেশের বিচার বিভাগই রাষ্ট্রের আইন-কানুন অনুযায়ী বিচারকার্য সম্পাদন করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকে।
উত্তর: একনায়কতন্ত্র হলো এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে সরকারের সমস্ত ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত থাকে। একনায়কতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধাচারণ কঠোর হাতে দমন করা হয়। অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনও এখানে গড়ে উঠতে দেওয়া হয় না। তাই একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী শাসনব্যবস্থা।
উত্তর: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা এমন এক পদ্ধতি বিশেষ, যার মাধ্যমে বিচার বিভাগ দেশের আইন ও শাসন বিভাগের দ্বারা গৃহীত কার্যব্যবস্থার সাংবিধানিক বৈধতা নির্ধারণ করে। এরূপ কার্যব্যবস্থা সাংবিধানিক বিধানাবলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আদালত এগুলো অবৈধ ও অকার্যকর বলে ঘোষণা করে। সুতরাং বিচার বিভাগ সংবিধান ব্যাখ্যা করে কোনো আইন বা প্রশাসনিক বিধিবিধানের সাংবিধানিক বৈধতা স্থির করার যে ক্ষমতা ভোগ করে তাকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বলে।
উত্তর: আইনসভার প্রধান দুটি কাজ হলো আইন প্রণয়ন ও সংবিধান সংশোধন। আইন বিভাগের প্রধান কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলো সমুন্নত রেখে আইনসভা প্রচলিত আইনের কিংবা প্রথাগত বিভাগের সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে থাকে। আইনসভা সংবিধান রচনা ও প্রয়োজনবোধে তা সংশোধন করে থাকে।
উত্তর: একনায়কতন্ত্রে সরকারের সমালোচনা করার অধিকার থাকে না বলে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। একনায়কতন্ত্র হচ্ছে এখন একটি সরকারব্যবস্থা যেখানে একজন শাসকের হাতে সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। রাষ্ট্রের সকল মন্ত্রী, আমলা ও জনগণকে এই শাসকের হুকুম মেনে চলতে হয়। একনায়কতন্ত্রে শাসকের আদেশই আইন বলে বিবেচিত হয়। একনায়কতন্ত্রে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। এ নীতির মূল কথা হলো এক দেশ, এক জাতি ও এক নেতা।
উত্তর: শাসন বিভাগকে ঘিরে রাষ্ট্রে সমগ্র শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় বিধায় একে রাষ্ট্রের মস্তিষ্কস্বরূপ বলা হয়। শাসন বিভাগের দক্ষতার ওপর রাষ্ট্রের উন্নতি-অবনতি নির্ভরশীল। শাসন বিভাগের প্রধান কাজ আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করা। শাসন বিভাগের মেধা যত বেশি হবে রাষ্ট্রের উন্নতি তত বেশি হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বও শাসন বিভাগের। সুতরাং বলা যায়, শাসন বিভাগ রাষ্ট্রের মস্তিষ্কস্বরূপ।
উত্তর: যে শাসনব্যবস্থা বা সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন, তাকে প্রজাতন্ত্র বলে। প্রজাতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক সরকারেরই একটি রূপ। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রচলিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে আর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।
উত্তর: নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য হচ্ছে সেই নীতি যার মাধ্যমে সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কার্যত সরকারের কোনো বিভাগই পুরোপুরি দক্ষ নয়। কোনো না কোনোভাবে এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা বিভাগগুলোকে স্বৈরাচারী করে তুলতে পারে। এজন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে।
আশাকরি “সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৭ম অধ্যায়” নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। পৌরনীতি ও সুশাসন এর সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।
Leave a Reply